Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আশ্বিন মাসের কৃষি

দিগন্ত জুড়ে সবুজ, শুভ্র কাশফুল আর সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ায় চিলতে সাদা মেঘ জানান দেয় শরৎকাল ঋতুর। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের সবার জন্য সাদা কাশফুলের শুভেচ্ছা। বর্ষা মৌসুমের সবটুকু ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া আর চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে কার্যকরি প্রস্তুতি নেবার সময় এখন। এ প্রেক্ষিতে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই আশ্বিন মাসের বৃহত্তর কৃষি ভুবনের করণীয় বিষয়গুলো।


আমন ধান
আমন ধানের বয়স ৪০-৫০ দিন হলে ইউরিয়ার শেষ কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং জমিতে ছিপছিপে পানি রাখতে হবে। এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। সে জন্য সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিতা পাইপের মাধ্যমে সম্পূরক সেচ দিলে পানির অপচয় অনেক কম হয়। শিষ কাটা লেদা পোকা ধানের জমি আক্রমণ করতে পারে। প্রতি বর্গমিটার আমন জমিতে ২-৫টি লেদা পোকার উপস্থিতি মারাত্মক ক্ষতির পূর্বাভাস। তাই সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় মাজরা, পামরি, চুঙ্গী, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খোলপড়া, পাতায় দাগ পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। সঠিক রোগ শনাক্তকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।


নাবি আমন রোপণ
কোন কারণে আমন সময় মতো চাষ করতে না পারলে অথবা নিচু এলাকায় আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিআর ২২, বিআর ২৩, ব্রি ধান৪৬, বিনাশাইল বা স্থানীয় জাতের চারা রোপণ করা যায়। গুছিতে ৫-৭টি চারা রোপণ করতে হবে। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ইউরিয়া প্রয়োগ ও অতিরিক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় এবং দেরির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়।

 

তুলা
এ সময় তুলাক্ষেতে গাছের বয়স ৬০ দিন পর্যন্ত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গোড়ার সবচেয়ে নিচের ১-২টি অঙ্গজ শাখা কেটে দেয়া ভালো। লাগাতার বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে গাছ হেলে পড়লে পানি নিষ্কাশনসহ হেলে যাওয়া গাছ সোজা করে গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে। ইউরিয়া, এমওপি ও বোরনসহ অন্যান্য অনুখাদ্য নিয়মিতভাবে পাতায় প্রয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ সময় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা গেলে সঠিক বালাই শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

পাট
নাবী পাট বীজ ফসল উৎপাদনে এ সময় গাছ থেকে গাছের দূরত্ব সমান রেখে অতিরিক্ত গাছ তুলে পাতলা করে দিতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার ১৫-২০ দিনে এবং তৃতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার ৪০-৪৫ দিনে প্রয়োগের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকে। এ সময় সবজি ও ফল বাগানে সাথী ফসল হিসেবে বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন।

 

আখ
আখের চারা উৎপাদন করার উপযুক্ত সময় এখন। সাধারণত বীজতলা পদ্ধতি এবং পলিব্যাগ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যায়। পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা হলে বীজ আখ কম লাগে এবং চারার মৃত্যুহার কম হয়। চারা তৈরি করে বাড়ির আঙ্গিনায় সুবিধাজনক স্থানে সারি করে রেখে খড় বা শুকনো আখের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।  চারার বয়স ১-২ মাস হলে মূল জমিতে রোপণ করা উচিত। কাটুই বা অন্য পোকা যেন চারার ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

 

বিনা চাষে ফসল আবাদ
মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় বিনা চাষে অনেক ফসল আবাদ করা যায়। ভুট্টা, গম, আলু, সরিষা, মাসকালাই বা অন্যান্য ডাল ফসল, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক বিনা চাষে লাভজনকভাবে আবাদ করা যায়। সঠিক পরিমাণ বীজ, সামান্য পরিমাণ সার এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে লাভ হবে অনেক। যেসব জমিতে উফশী বোরো ধানের চাষ করা হয় সেসব জমিতে স্বল্পমেয়াদি সরিষা  জাত (বারি সরিষা-৯, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯ ইত্যাদি)চাষ করতে পারেন।

 

শাকসবজি
আগাম শীতের সবজি উৎপাদনের জন্য উঁচু জয়গা কুপিয়ে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে শাক উৎপাদন করা যায় যেমন মুলা, লালশাক, পালংশাক, চিনা শাক, সরিষা শাক অনায়াসে করা যায়। সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন, ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করে মূল জমিতে বিশেষ যত্নে আবাদ করা যায়।

 

কলা
অন্যান্য সময়ের থেকে আশ্বিন মাসে কলার চারা রোপণ করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এতে ১০-১১ মাসে কলার ছড়া কাটা যায়। ভালো উৎস বা বিশ্বস্ত চাষি ভাইয়ের কাছ থেকে কলার অসি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। কলার চারা রোপণের জন্য ২-২.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি গভীর গর্ত করে রোপণ করতে হবে। গর্তপ্রতি ৫-৭ কেজি গোবর, ১২৫ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পর অসি চারা রোপণ করতে হবে। কলা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা ছাড়া যে কোন রবি ফসল চাষ করা যায়।


গাছপালা
বর্ষায় রোপণ করা চারা কোনো কারণে নষ্ট হলে সেখানে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। বড় হয়ে যাওয়া চারার সঙ্গে বাঁধা খুঁটি সরিয়ে দিতে হবে এবং চারার চারদিকের বেড়া প্রয়োজনে সরিয়ে বড় করে দিতে হবে। মরা বা রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। চারা গাছসহ অন্যান্য গাছে সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এখনই। গাছের গোড়ার মাটি ভালো করে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। দুপুর বেলা গাছের ছায়া যতটুকু স্থানে পড়ে ঠিক ততটুকু স্থান কোপাতে হবে। পরে কোপানো স্থানে জৈব ও রাসায়নিক সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে।

 

প্রাণিসম্পদ
হাঁস-মুরগির কলেরা, ককসিডিয়া, রানীক্ষেত রোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রাথমিকভাবে টিকা প্রদান, প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানোসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। এ মাসে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাচ্চা ফুটানোর জন্য অতিরিক্ত ডিম দেয়া যাবে না। তাছাড়া ডিম ফুটানো মুরগির জন্য অতিরিক্ত বিশেষ খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

আশ্বিন মাসে গবাদিপশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো দরকার। গবাদি পশুকে খোলা জায়গায় না রেখে রাতে ঘরের ভিতরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পানিতে জন্মানো গোখাদ্য এককভাবে না খাইয়ে শুকিয়ে খরের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এ সময় ভুট্টা, মাসকলাই, খেসারি বুনো ঘাস উৎপাদন করে গবাদিপশুকে খাওয়াতে পারেন। গর্ভবতী গাভী, সদ্য ভূূমিষ্ঠ বাছুর ও দুধালো গাভীর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এ সময় গবাদি প্রাণীর মড়ক দেখা দিকে পারে। তাই গবাদিপশুকে তড়কা, গলাফুলা, ওলান ফুলা রোগের জন্য প্রতিষেধক, প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চত করতে হবে।
 

মৎস্যসম্পদ
বর্ষায় পুকুরে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং পুকুরের পাড় ভালো করে বেঁধে দেয়া প্রয়োজন। পুকুরের মাছকে নিয়মিত পুষ্টিকর সম্পূরক খাবার সরবরাহ করা দরকার। এ সময় পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া পুকুরে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ সারাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি মাছের খামার থেকে জিওল মাছের পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা নিতে পারেন।


আশ্বিন মাসে নিয়মিত কৃষি কাজের পাশাপাশি সারা দেশজুড়ে ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য এ অভিযান। এককভাবে বা কোন নির্দিষ্ট এলাকায় ইঁদুর দমন করলে কোন লাভ হবে না। ইঁদুর দমন কাজটি করতে হবে দেশের সকল মানুষকে একসাথে মিলে এবং ইঁদুর দমনের সকল পদ্ধতি ব্যবহার করে। ইঁদুর নিধনের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় সেগুলো হলো- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক চাষাবাদ, গর্তে ধোঁয়া দেয়া, ফাঁদ পাতা, উপকারী প্রাণী যেমন- পেচা, গুঁইসাপ, বিড়াল দ্বারা ইঁদুর দমন, বিষটোপ এবং গ্যাসবড়ি ব্যবহার করা। আসুন সবাই একসাথে ইঁদুর দমন করি। সবাই ভালো থাকি।

 

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন:০২৫৫০২৮৪০৪, ই-মেইল :editor@ais.gov.bd

আশ্বিন মাসের কৃষি

আশ্বিন মাসের কৃষি
১৬ সেপ্টেম্বর - ১৫ অক্টোবর

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম

দিগন্ত জোড়া সবুজ, শুভ্র কাশফুল আর সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ায় চিলতে সাদা মেঘ জানান দেয় শরৎকাল ঋতুর। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের সবার জন্য সাদা কাশফুলের শুভেচ্ছা। বৈশ্বিক কোরনা পরিস্থিতিতে এবং চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে কার্যকরি প্রস্তুতি নেবার সময় এখন। এ প্রেক্ষিতে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই আশ্বিন মাসের বৃহত্তর কৃষি ভুবনের করণীয় বিষয়গুলো।
আমন ধান
আমন ধানের বয়স    ৪০-৫০ দিন হলে      ইউরিয়ার শেষ কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং জমিতে ছিপছিপে পানি রাখতে হবে। এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। সে জন্য সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিতাপাইপের মাধ্যমে সম্পূরক সেচ দিলে পানির অপচয় অনেক কম হয়। শিষ কাটা লেদা পোকা ধানের জমি আক্রমণ করতে পারে। প্রতি বর্গমিটার আমন জমিতে ২-৫টি লেদা পোকার উপস্থিতি মারাত্মক ক্ষতির পূর্বাভাস। তাই সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় মাজরা, পামরি, চুঙ্গী, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খোলপোড়া, পাতায় দাগ পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। সঠিক রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নাবি আমন রোপণ
কোন কারণে আমন সময়মতো চাষ করতে না পারলে অথবা নিচু এলাকায় আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিআর ২২, বিআর ২৩, ব্রি ধান৪৬, বিনাশাইল বা স্থানীয় জাতের চারা রোপণ করা যায়। গুছিতে ৫-৭টি চারা রোপণ করতে হবে। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ইউরিয়া প্রয়োগ ও অতিরিক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় এবং দেরির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়।
তুলা
এ সময় তুলাক্ষেতে গাছের বয়স ৬০ দিন পর্যন্ত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গোড়ার সবচেয়ে নিচের ১-২টি অঙ্গজ শাখা কেটে দেয়া ভালো। লাগাতার বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে গাছ হেলে পড়লে পানি নিষ্কাশনসহ হেলে যাওয়া গাছ সোজা করে গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে।    ইউরিয়া, এমওপি ও বোরনসহ অন্যান্য অনুখাদ্য নিয়মিতভাবে পাতায় প্রয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ সময় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা গেলে সঠিক বালাই শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাট
নাবি পাট ফসল উৎপাদনে এ সময় গাছ থেকে গাছের দূরত্ব সমান রেখে অতিরিক্ত গাছ তুলে পাতলা করে দিতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার ১৫-২০ দিনে এবং তৃতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার ৪০-৪৫ দিনে প্রয়োগের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকে। এ সময় সবজি ও ফল বাগানে সাথী ফসল হিসেবে বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন।
আখ
আখের চারা উৎপাদন করার উপযুক্ত সময় এখন। সাধারণত বীজতলা পদ্ধতি এবং পলিব্যাগ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যায়। পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা হলে বীজ আখ কম লাগে এবং চারার মৃত্যুহার কম হয়। চারা তৈরি করে বাড়ির আঙ্গিনায় সুবিধাজনক স্থানে সারি করে রেখে খড় বা শুকনো আখের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।  চারার বয়স ১-২ মাস হলে মূল জমিতে রোপণ করা উচিত। কাটুই বা অন্য পোকা যেন চারার ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
বিনা চাষে ফসল আবাদ
মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় বিনা চাষে অনেক ফসল আবাদ করা যায়। ভুট্টা, গম, আলু, সরিষা, মাসকালাই বা অন্যান্য ডাল ফসল, লালশাক, পালংশাক,     ডাঁটাশাক বিনা চাষে লাভজনকভাবে আবাদ করা যায়। সঠিক পরিমাণ বীজ, সামান্য পরিমাণ সার এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে লাভ হবে অনেক। যেসব জমিতে উফশী বোরো ধানের চাষ করা হয় সেসব জমিতে স্বল্পমেয়াদি সরিষা  জাত (বারি সরিষা-৯, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯ ইত্যাদি) চাষ করতে পারেন।
শাকসবজি
আগাম শীতের সবজি উৎপাদনের জন্য উঁচু জায়গা কুপিয়ে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে শাক উৎপাদন করা যায় যেমনÑ মুলা, লালশাক, পালংশাক, চীনা শাক, সরিষা শাক অনায়াসে করা যায়। সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন, ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করে মূল জমিতে বিশেষ যতেœ আবাদ করা যায়।
কলা
অন্যান্য সময়ের থেকে আশ্বিন মাসে কলার চারা রোপণ করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এতে ১০-১১ মাসে কলার ছড়া কাটা যায়। ভালো উৎস বা বিশ্বস্ত চাষি ভাইয়ের কাছ থেকে কলার অসি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। কলার চারা রোপণের জন্য ২-২.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি গভীর গর্ত করে রোপণ করতে হবে। গর্ত প্রতি ৫-৭ কেজি গোবর, ১২৫ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পর অসি চারা রোপণ করতে হবে। কলাবাগানে সাথী ফসল হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা ছাড়া যে কোন রবি ফসল চাষ করা যায়।
গাছপালা
বর্ষায় রোপণ করা চারা কোনো কারণে নষ্ট হলে সেখানে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। বড় হয়ে যাওয়া চারার সঙ্গে বাঁধা খুঁটি সরিয়ে দিতে হবে এবং চারার চারদিকের বেড়া প্রয়োজনে সরিয়ে বড় করে দিতে হবে। মরা বা রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। চারা গাছসহ অন্যান্য গাছে সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এখনই। গাছের গোড়ার মাটি ভালো করে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। দুপুর বেলা গাছের ছায়া যতটুকু স্থানে পড়ে ঠিক ততটুকু স্থান কোপাতে হবে। পরে কোপানো স্থানে জৈব ও রাসায়নিক সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে।
প্রাণিসম্পদ
হাঁস-মুরগির কলেরা, ককসিডিয়া, রানীক্ষেত রোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রাথমিকভাবে টিকা প্রদান, প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানোসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। এ মাসে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাচ্চা ফুটানোর জন্য অতিরিক্ত ডিম দেয়া যাবে না। তাছাড়া ডিম ফুটানো মুরগির জন্য অতিরিক্ত বিশেষ খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আশ্বিন মাসে গবাদিপশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো দরকার। গবাদি পশুকে খোলা জায়গায় না রেখে রাতে ঘরের ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পানিতে জন্মানো গোখাদ্য এককভাবে না খাইয়ে শুকিয়ে খরের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এ সময় ভুট্টা, মাসকলাই, খেসারি বুনো ঘাস উৎপাদন করে গবাদিপশুকে খাওয়াতে পারেন। গর্ভবতী গাভী, সদ্য ভূূমিষ্ঠ বাছুর ও দুধালো গাভীর বিশেষ যতœ নিতে হবে। এ সময় গবাদি প্রাণীর মড়ক দেখা দিকে পারে। তাই গবাদিপশুকে তড়কা, গলাফুলা, ওলান ফুলা রোগের জন্য প্রতিষেধক, প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চত করতে হবে।
মৎস্যসম্পদ
বর্ষায় পুকুরে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং পুকুরের পাড় ভালো করে বেঁধে দেয়া প্রয়োজন। পুকুরের মাছকে নিয়মিত পুষ্টিকর সম্পূরক খাবার সরবরাহ করা দরকার। এ সময় পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া পুকুরে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ সারাতে    প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি মাছের খামার থেকে জিওল মাছের পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা নিতে পারেন।
আশ্বিন মাসে নিয়মিত কৃষি কাজের পাশাপাশি সারা দেশজুড়ে ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তায় ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য এ অভিযান খুবই জরুরি। এককভাবে বা কোন নির্দিষ্ট এলাকায় ইঁদুর দমন করলে কোন লাভ হবে না। ইঁদুর দমন কাজটি করতে হবে দেশের সকল মানুষকে একসাথে মিলে এবং ইঁদুর দমনের সকল পদ্ধতি ব্যবহার করে। ইঁদুর নিধনের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় সেগুলো হলো- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক চাষাবাদ, গর্তে ধোঁয়া দেয়া, ফাঁদ পাতা, উপকারী প্রাণী যেমন- পেচা, গুঁইসাপ, বিড়াল দ্বারা ইঁদুর দমন, বিষটোপ এবং গ্যাসবড়ি ব্যবহার করা। আসুন সবাই একসাথে ইঁদুর দমন করি। সবাই ভালো থাকি। য়

সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪; ই-মেইল : fardousi30@gmail.com

আশ্বিন মাসের কৃষি

কাশফুলের শুভ্রতা, দিগন্ত জোড়া সবুজ আর সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ানো চিলতে সাদা মেঘ আমাদের মনে করিয়ে দেয় বর্ষার শেষে আনন্দের বার্তা নিয়ে শরৎ এসেছে। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা। বর্ষা মৌসুমের সবটুকু ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া আর চলতি মৌসুমের পুরো পাওনা আদায় করতে কার্যকরী প্রস্তুতি নেয়ার সময় এখন। এ প্রেক্ষিতে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই আশ্বিন মাসের বৃহত্তর কৃষি ভুবনের  করণীয় বিষয়গুলো।
 

আমন ধান
আমন ধানের বাড়ন্ত পর্যায় এখন। ধান গাছের বয়স ৪০-৫০ দিন হলে ইউরিয়ার শেষ কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং জমিতে ছিপছিপে পানি রাখতে হবে। এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। সেজন্য সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। নিচু এলাকায় আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থানীয় উন্নত জাতের শাইল ধানের চারা রোপণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতি গুছিতে ৫-৭টি চারা দিয়ে ঘন করে রোপণ করতে হবে।


এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। এতে ফলন অনেক কমে যায়। সুতরাং খরা দেখা দিলে সম্পূরক সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নদী, পুকুর, খাল-বিল, ডোবা যেখানেই পানি পাওয়া যাবে সেখান থেকে পাম্প, নলকূপ, দোন, সেঁওতি দিয়ে সেচ দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে সম্পূরক সেচ আমনের ফলন বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।


শিষ কাটা লেদাপোকা ধানের জমি আক্রমণ করতে পারে। প্রতি বর্গমিটার আমন জমিতে ২-৫টি লেদা পোকার উপস্থিতি মারাত্মক ক্ষতির পূর্বাভাস। তাই সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় মাজরা, পামরি, চুঙ্গি, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া খোলপড়া, পাতায় দাগপড়া রোগ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে, সঠিক সময় শেষ কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।


কোনো কারণে আমন সময় মতো চাষ করতে না পারলে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিআর২২, বিআর২৩, বিনাশাইল বা স্থানীয় জাতের চারা রোপণ করা যায়। এক্ষেত্রে গুছিতে ৫-৭টি চারা রোপণ করতে হবে। সেসাথে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ইউরিয়া প্রয়োগ ও অতিরিক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় এবং দেরির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়।


আখ
আখের চারা উৎপাদন করার উপযুক্ত সময় এখন। সাধারণত বীজতলা পদ্ধতি এবং পলিব্যগ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যায়। তবে পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা হলে বীজ আখ কম লাগে এবং চারার মৃত্যুহার কম হয়।  চারা তৈরি করে বাড়ির আঙিনায় সুবিধাজনক স্থানে সারি করে রেখে খড় বা শুকনো আখের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।  চারার বয়স ১-২ মাস হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। কাটুই বা অন্য পোকা যেন চারার ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।


বিনা চাষে ফসল আবাদ
মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় বিনা চাষে অনেক ফসল আবাদ করা যায়। এ সময় ভুট্টা, গম, আলু, সরিষা, মাসকালাই বা অন্যান্য ডাল ফসল বিনা চাষে লাভজনকভাবে অনায়াসে আবাদ করা যায়। সঠিক পরিমাণ বীজ, সামান্য পরিমাণ সার এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে লাভ হবে অনেক। জমির জো বুঝে এবং আবহাওয়ার কথা খেয়াল রেখে বিনা চাষে ফসল করলে খরচ খুব কম হয় এবং দ্রুত একটি ফসল পাওয়া যায়।

 

শাকসবজি
জমির মাটি এখনো ভেজা এবং স্যাঁতসেঁতে। আগাম শীতের সবজি উৎপাদনের জন্য উঁচু জয়গা কুপিয়ে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার বিশেষ করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে শাক উৎপাদন করা যায়। শাকের মধ্যে মুলা, লালশাক, পালংশাক, চিনাশাক, সরিষাশাক অনায়াসে করা যায়। তাছাড়া সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন, ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করে মূল জমিতে বিশেষ যত্নে আবাদ করা যায়।


কলা
অন্যান্য সময়ের থেকে আশ্বিন মাসে কলার চারা রোপণ করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এতে ১০-১১ মাসে কলার ছড়া কাটা যায়। ভালো উৎস বা বিশ্বস্ত চাষি ভাইয়ের কাছ থেকে কলার অসি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। কলার চারা রোপণের জন্য ২-২.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি. গভীর গর্ত করে রোপণ করতে হবে। গর্তপ্রতি ৫-৭ কেজি গোবর, ১২৫ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এওপি সার এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড ভালোভাবে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পর অসি চারা রোপণ করতে হবে। কলাবাগানে সাথি ফসল হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা ছাড়া যে কোন রবি ফসল চাষ করা যায়। এতে একটি অতিরিক্ত ফসলের এবং সে সাথে অর্থও পাওয়া যায়।

 

গাছপালা
গাছের চারা রোপণের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে রোপণ করা চারা কোনো কারণে মারা গেলে সেখানে নতুন চারা রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে। রোপণ করা চারার যত্ন নিতে হবে এখন। যেমন বড় হয়ে যাওয়া চারার সঙ্গে বাঁধা খুঁটি সরিয়ে দিতে হবে এবং চারার চারদিকের বেড়া প্রয়োজনে সরিয়ে বড় করে দিতে হবে। মরা বা রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে । চারা গাছসহ অন্যান্য গাছে সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এখন। গাছের গোড়ার মাটি ভালো করে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। দুপুর বেলা গাছের ছায়া যতটুকু স্থানে পড়ে ঠিক ততটুকু স্থান কোপাতে হবে। পরে কোপানো স্থানে জৈব ও রাসায়নিক সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছের জাত ও বয়সের কারণে সারের মাত্রাও বিভিন্ন হয়।

 

প্রাণিসম্পদ
হাঁস-মুরগির কলেরা, ককসিডিয়া, রানীক্ষেত রোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রাথমিকভাবে টিকা প্রদান, প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানোসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। এ মাসে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাচ্চা ফুটানোর জন্য অতিরিক্ত ডিম দেয়া যাবে না। তাছাড়া ডিম ফুটানো মুরগির জন্য অতিরিক্ত বিশেষ খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।


আশ্বিন মাসে গবাদিপশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো দরকার। গবাদিপশুকে খোলা জায়গায় না রেখে রাতে ঘরের ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পানিতে জন্মানো পশুখাদ্য এককভাবে না খাইয়ে শুকিয়ে খরের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এ সময় ভুট্টা, মাসকলাই, খেসারি, বুনো ঘাস উৎপাদন করে গবাদিপশুকে খাওয়াতে পারেন। গর্ভবতী গাভী, সদ্য ভূমিষ্ঠ বাছুর ও দুধালো গাভীর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এ সময় গবাদিপ্রাণির মড়ক দেখা দিকে পারে। তাই গবাদিপশুকে তড়কা, গলাফুলা, ওলান ফুলা রোগের জন্য প্রতিষেধক, প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চত করতে হবে।


মৎস্যসম্পদ
বর্ষায় পুকুরে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং পুকুরের পাড় ভালো করে বেঁধে দিতে হবে। পুকুরের মাছকে নিয়মিত পুষ্টিকর সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে। এ সময় পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া পুকুরে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ সারাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে । এ সময় সরকারি ও বেসরকারি মাছের খামার থেকে জিওল মাছের পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা নিতে পারেন।


সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আশ্বিন মাসে সারা দেশজুড়ে ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়। আমন ধান রক্ষাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির মাত্রা কমানোর জন্য এ অভিযান চলে। এককভাবে বা কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় ইঁদুর দমন করলে কোনো লাভ হবে না। ইঁদুর দমন কাজটি করতে হবে দেশের সব মানুষকে একসাথে মিলে এবং ইঁদুর দমনের সব পদ্ধতি ব্যবহার করে। ইঁদুর নিধনের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় সেগুলো হলো- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক চাষাবাদ, গর্তে ধোঁয়া দেয়া, ফাঁদ পাতা, উপকারী প্রাণী যেমন- পেঁচা, গুঁইসাপ, বিড়াল দ্বারা ইঁদুর দমন, বিষটোপ এবং গ্যাস বড়ি ব্যবহার  করা। আসুন সবাই একসাথে অতিচালাক আমাদের এ পরমশত্রুটিকে দমন করি। সবার জন্য নিশ্চিত সফল কৃষি উৎপাদন কামনা করে এ মাসের কৃষি এখানেই শেষ করলাম। আল্লাহ হাফেজ।

 

কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন*
* সহকারী তথ্য অফিসার (শস্য উৎপাদন), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

আশ্বিন মাসের কৃষি

আশ্বিন মাসের কৃষি
(১৬ সেপ্টেম্বর - ১৬ অক্টোবর)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
আশি^ন মাস। শীতল হতে থাকে আবহাওয়া। শুভ্র কাশফুল, সাদা মেঘ, সুনীল আকাশ। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে কচি ধান বাতাসের সাথে সাথে দুলছে। বৃক্ষরাজির সবুজপাতা ও মাটি সিক্ত করে স্বচ্ছ শিশির যা অবসাদগ্রস্ত মনটা আপ্লুত হয়ে উঠে। বৈশি^ক উষ্ণায়নের কারণে প্রকৃতি বিরূপ প্রভাব পড়ছে।  প্রকৃতির এরূপ পরিস্থিতিতে আমরা জেনে নেই আশ্বিন মাসের বৃহত্তর কৃষি ভুবনের করণীয় বিষয়গুলো।
আমন ধান
আমন ধানের বয়স ৪০-৫০ দিন হলে ইউরিয়ার শেষ কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং জমিতে ছিপছিপে পানি রাখতে হবে। এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। সে জন্য সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিতাপাইপের মাধ্যমে সম্পূরক সেচ দিলে অথবা কৃষি কাজে পানিসাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করলে পানির অপচয় অনেক কম হয়। শিষ কাটা লেদাপোকা ধানের জমি আক্রমণ করতে পারে। প্রতি বর্গমিটার আমন জমিতে ২-৫টি লেদা পোকার উপস্থিতি মারাত্মক ক্ষতির পূর্বাভাস। তাই সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় মাজরা, পামরি, চুঙ্গী, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খোলপোড়া, পাতায় দাগ পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। সঠিক রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নাবি আমন রোপণ
কোন কারণে আমন সময়মতো চাষ করতে না পারলে অথবা নিচু এলাকায় আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিআর ২২, বিআর ২৩, ব্রি ধান৪৬, বিনাশাইল বা স্থানীয় জাতের চারা রোপণ করা যায়। গুছিতে ৫-৭টি চারা রোপণ করতে হবে। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ইউরিয়া প্রয়োগ ও অতিরিক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় এবং দেরির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়।
তুলা
এ সময় তুলাক্ষেতে গাছের বয়স ৬০ দিন পর্যন্ত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গোড়ার সবচেয়ে নিচের ১-২টি অঙ্গজ শাখা কেটে দেয়া ভালো। লাগাতার বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে গাছ হেলে পড়লে পানি নিষ্কাশনসহ হেলে যাওয়া গাছ সোজা করে গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে। ইউরিয়া, এমওপি ও বোরনসহ অন্যান্য অনুখাদ্য নিয়মিতভাবে পাতায় প্রয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ সময় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা গেলে সঠিক বালাই শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাট
নাবি পাট ফসল উৎপাদনে এ সময় গাছ থেকে গাছের দূরত্ব সমান রেখে অতিরিক্ত গাছ তুলে পাতলা করে দিতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার ১৫-২০ দিনে এবং তৃতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার ৪০-৪৫ দিনে প্রয়োগের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকে। এ সময় সবজি ও ফল বাগানে সাথী ফসল হিসেবে বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন।
আখ
আখের চারা উৎপাদন করার উপযুক্ত সময় এখন। সাধারণত বীজতলা পদ্ধতি এবং পলিব্যাগ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যায়। পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা হলে বীজ আখ কম লাগে এবং চারার মৃত্যুহার কম হয়। চারা তৈরি করে বাড়ির আঙ্গিনায় সুবিধাজনক স্থানে সারি করে রেখে খড় বা শুকনো আখের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। চারার বয়স ১-২ মাস হলে মূল জমিতে রোপণ করা উচিত। কাটুই বা অন্য পোকা যেন চারার ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
বিনা চাষে ফসল আবাদ
মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় বিনা চাষে অনেক ফসল আবাদ করা যায়। ভুট্টা, গম, আলু, সরিষা, মাসকালাই বা অন্যান্য ডাল ফসল, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক বিনা চাষে লাভজনকভাবে আবাদ করা যায়। সঠিক পরিমাণ বীজ, সামান্য পরিমাণ সার এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে লাভ হবে অনেক। যেসব জমিতে উফশী বোরো ধানের চাষ করা হয় সেসব জমিতে স্বল্পমেয়াদি সরিষা  জাত (বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-১৮, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-১০ ইত্যাদি) চাষ করতে পারেন।
শাকসবজি
আগাম শীতের সবজি উৎপাদনের জন্য উঁচু জায়গা কুপিয়ে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে শাক উৎপাদন করা যায় যেমন- মুলা, লালশাক, পালংশাক, চীনাশাক, সরিষাশাক অনায়াসে করা যায়। সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন, ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করে মূল জমিতে বিশেষ যতেœ আবাদ করা যায়।
কলা
অন্যান্য সময়ের থেকে আশ্বিন মাসে কলার চারা রোপণ করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এতে   ১০-১১ মাসে কলার ছড়া কাটা যায়। ভালো উৎস বা বিশ্বস্ত কৃষক-কৃষানির কাছ থেকে কলার অসি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। কলার চারা রোপণের জন্য ২-২.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি. গভীর গর্ত করে রোপণ করতে হবে। গর্ত প্রতি ৫-৭ কেজি গোবর, ১২৫ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পর অসি চারা রোপণ করতে হবে। কলাবাগানে সাথী ফসল হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা ছাড়া যে কোন রবি ফসল চাষ করা যায়।
সরকারিভাবে মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারে জি-৯ কলার টিসু কালচার চারার উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে। এ জাতের কলার ফলন অন্য জাতের চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি, সুস্বাদু ও রোগ প্রতিরোধী। মাত্র ৮-৯ মাসের মধ্যে কলা পাওয়া যায়।
গাছপালা
বর্ষায় রোপণ করা চারা কোনো কারণে নষ্ট হলে সেখানে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। বড় হয়ে যাওয়া চারার সঙ্গে বাঁধা খুঁটি সরিয়ে দিতে হবে এবং চারার চারদিকের বেড়া প্রয়োজনে সরিয়ে বড় করে দিতে হবে। মরা বা রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। চারা গাছসহ অন্যান্য গাছে সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এখনই। গাছের গোড়ার মাটি ভালো করে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। দুপুর বেলা গাছের ছায়া যতটুকু স্থানে পড়ে ঠিক ততটুকু স্থান কোপাতে হবে। পরে কোপানো স্থানে জৈব ও রাসায়নিক সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে।
এসময় তাল পাকে। তালের চারা তৈরি করার জন্য উত্তম মাতৃগাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। পরিপক্ব তালের উপরের শক্ত খোসা ছাড়িয়ে কিছু সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরে হাত দিয়ে কচলিয়ে আঁশ হতে রস বের করতে হবে। প্রতিটি তালে সাধারণত তিনটি করে বীজ থাকে এবং রস সংগ্রহ করার সময় বীজগুলো পৃথক হয়ে যাবে। বীজ সংগ্রহের পরপরই বীজতলায় বপন করতে হবে। বীজ শুকিয়ে গেলে অঙ্কুরোদগম হবে না। পরিপক্ব তালের বীজের অঙ্কুরোদগমের হার সাধারণত ৭০-১০০ ভাগ।
আশ্বিন মাসে নিয়মিত কৃষি কাজের পাশাপাশি সারা দেশজুড়ে ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়। খাদ্য নিরাপত্তায় ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য এ অভিযান খুবই জরুরি। এককভাবে বা কোন নির্দিষ্ট এলাকায় ইঁদুর দমন করলে কোন লাভ হবে না। ইঁদুর দমন কাজটি করতে হবে দেশের জনগণকে একসাথে মিলে এবং ইঁদুর দমনের বৈজ্ঞানিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আসুন সবাই একসাথে ইঁদুর দমন করি। সবাই ভালো থাকি।

সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪; ই-মেইল : editor@ais.gov.bd

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon